শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আলোকে মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজিজ্ঞাসা
১। পঞ্চ মহাভূত কি?
উঃ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম।
২। আত্মা কি?
উঃ জীবাত্মা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৩। আত্মার নিত্যধর্ম কি?
উঃ ভগবান পূর্ণ, আত্মা তার অংশ, তাই জীবাত্মার নিত্য ধর্ম হচ্ছে ভগবানের সেবা করা, কেন না অংশের কাজ হচ্ছে পূর্ণের সেবা করা।
৪। মনের ধর্ম কি?
উঃ মনের ধর্ম সংকল্প ও বিকল্প।
৫। দেহের ধর্ম কি?
উঃ দেহের ধর্ম ভোগ আর ত্যাগ।
৬। দেহের ছয়টি পরিবর্তন কি কি?
উঃ *জন্ম *বৃদ্ধি *সন্তান-সন্তুতি সৃষ্টি *স্থিতি *ক্ষয় *মৃত্যু।
৭। জীবের 'স্বরূপ' কি?
উঃ জীবের 'স্বরূপ' হয় কৃষ্ণের নিত্যদাস।
৮। আত্মার আকার কি?
উঃ আত্মার আকার চুলের অগ্রভাগের দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। তা এতই ক্ষুদ্র যে এই জড় চক্ষু দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে আত্মাকে দর্শন করা যায় না। এ ছাড়া আত্মা জড় পদার্থ নয়, তাই জড়ীয় ইন্দ্রিয় ও যন্ত্র দিয়ে তা দেখা অসম্ভব।
৯। জড় জগৎ কি?
উঃ জড় জগৎটি ভগবানের বহিরঙ্গা ত্রিগুণাত্মিকা মায়া শক্তির প্রকাশ।
১০। কি কি উপাদান দিয়ে জড়-জগৎ তৈরী হয়েছে?
উঃ ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার এই আটটি উপাদান দিয়ে এই জড়-জগৎ তৈরী হয়েছে।
১১। আমি কে?
উঃ আমি চিন্ময় আত্মা, স্থুল জড় দেহ নই।
১২। ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি বিষয় কি কি?
উঃ রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ র্স্পশ।
১৩। পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় কি কি?
উঃ নাক, জিভ, চোখ, কান ও ত্বক।
১৪। পঞ্চ কমেন্দ্রিয় কি?
উঃ বাক, পানি, পাদ, উপস্থ, পায়ু।
১৫। স্থূল শরীরটি কি কি উপাদান দিয়ে তৈরী?
উঃ জীবের স্থূল শরীর ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি ও আকাশ দিয়ে তৈরী।
১৬। জীবের সূক্ষ্ম শরীরটি কি উপাদান দিয়ে তৈরী?
উঃ জীবের সূক্ষ্ম শরীরটি মন, বুদ্ধি ও অহংকার দিয়ে তৈরী।
১৭। জীবের মৃত্যুর পর তার কি গতি হয়?
উঃ জীবের মৃত্যুর পর দুই প্রকার গতি হয়।
এক-- যে সমস্ত জীর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট আত্মসর্মপণ করে, তারা ভগবদ্ভজনের প্রভাবে সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে নিত্য আলয় ভগবদ্ধামে গমন করে। সেখানে তারা দিব্য শরীর প্রাপ্ত হয়ে নিত্যকালের জন্য ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হয়।
দুই-- যাদের জড়জাগতিক কামনা বাসনা আছে, তারা মৃত্যুর মাধ্যমে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম দিয়ে তৈরী স্থুল শরীরকে পরিত্যাগ করে। কিন্তু মন, বুদ্ধি ও অহংকার নির্মিত সূক্ষ্ম শরীর তাদের পাপ ও পূর্ণ কর্মফল বহন করে। পাপ কর্মের ফলস্বরূপ তারা যমযাতনা ভোগ করে আর পূর্ণ কর্মের ফলস্বরূপ স্বর্গসুখ ভোগ করে থাকে। এই ভোগের পর তাদের নিজ নিজ কর্ম ও চেতনা অনুসারে তারা আর একটি স্থুল জড় শরীর প্রাপ্ত হয়। এভাবে ৮৪ লক্ষ জীব প্রজাতির যে কোন একটি প্রজাতিতে তাদের জন্মগ্রহণ করতে হয়।
১৮। দেহ ও আত্মার পার্থক্য কি?
উঃ জড় বস্তুর দ্বার নির্মিত শরীর সদা পরিবর্তনশীল, নশ্বর, বিনাশশীল, অনিত্য, স্থুল, বহিরঙ্গা জড়া প্রকৃতির সৃষ্টি। জড়দেহ অচেতন, পরিমাপযোগ্য; তাকে কাটা যায়, শুকানো যায়, পোড়ানো যায়, ভেজানো যায়, তা দুঃখ ক্লেশের আধার স্বরূপ।
আত্মা অপরিবর্তনীয়, অব্যয়, অক্ষয়, অবিনশ্বর নিত্য, সনাতন, সূক্ষ্ম, অপরিমেয়, ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, চেতন, অনেক, অদাহ্য, অক্লেদ্য, অশোষ্য, সর্বব্যাপ্ত, আনন্দময়।
১৯। জড় পদার্থ ও চিন্ময় বস্তু আত্মার মধ্যে পার্থক্য কি ?
উঃ জড় বস্তু চিন্ময় আত্মা
১। ভগবানের বহিরঙ্গা ১। ভগবানের অন্তরঙ্গা
প্রকৃতিজাত। প্রকৃতি হতে উদ্ভূত।
২। অচেতন, অজ্ঞান ২। চেতনাময়, জ্ঞানময়।
বস্তুপিণ্ড মাত্র।
৩। জড় ইন্দ্রিয় দ্বারা ৩। জড় ইন্দ্রিয়ের
অনুভবযোগ্য অগোচর।
৪। ব্যক্তিত্বহীন। ৪। ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র,
প্রকৃত 'আমি'।
২০। আত্মা শরীরের কোন স্থানে অবস্থান করে?
উঃ আত্মা শরীরের হৃদ্দেশে অবস্থান করে।
২১। দেহে আত্মার অবস্থানের লক্ষণ কি?
উঃ দেহে আত্মার অবস্থানের লক্ষণ হচ্ছে দেহে পরিব্যাপ্ত চেতনা। যে পর্যন্ত একটি দেহে আত্মার উপস্থিতি থাকে, সে পর্যন্ত ঐ জীর দেহে চেতনা প্রকাশিত থাকে। আত্মা-দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলে দেহ একটি অচেতন, পচনশীল, জড়পিণ্ডে পরিণত হয়।
২২। জীব কত প্রকারের?
উঃ জীব তিন প্রকারের ১) নিত্যবদ্ধ ২) নিত্যমুক্ত ৩) বন্ধনমুক্ত। ভগবদবিমুখ জীব যারা এই জড় জগতে ত্রিগুণাত্মিকা মায়াশক্তির প্রভাবে বদ্ধ হয়ে আছে ও জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তাদেরকে নিত্যবদ্ধ জীব বলা হয়।
যে সমস্ত জীব ভগবদ্ভজন করে এই বদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জগতে প্রবেশে উন্মুখ, তাদেরকে বন্ধনমুক্ত জীব বলা হয়।
২৩। এই জড় জগতে কত প্রকার জীব প্রজাতি রয়েছে? তাদের বর্ণনা দাও।
উঃ এই জড় জগতে ৮৪ লক্ষ জীব যোনি রয়েছে। এদের মধ্যে কীটপতঙ্গ ১১ লক্ষ, জলচর ৯ লক্ষ, উদ্ভিদ ২০ লক্ষ, পশু ৩০ লক্ষ, পক্ষী ১০ লক্ষ এবং মানুষের মধ্যে রয়েছে ৪ লক্ষ প্রজাতি।
২৪। জীবের প্রকৃত সমস্যা বা দুঃখ কি?
উঃ জীবের প্রকৃত সমস্যা বা দুঃখ হচ্ছে-- জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি।
২৫। ত্রিতাপ ক্লেশ কি?
উঃ জড় জগতে অবস্থান কালে জীবাত্মা যে তিন রকম অবশ্যম্ভাবী দুঃখ লাভ করে তাকে বলা হয় ত্রিতাপ ক্লেশ। সেগুলি হচ্ছে---
(১) আধিভৌতিক ক্লেশ
(২) আধিদৈবিক ক্লেশ
(৩) আধ্যাত্মিক ক্লেশ।
জীব তার নিজের মন ও শরীর থেকে যে ক্লেশ প্রাপ্ত হয় তা আধ্যাত্মিক ক্লেশ। যেমনঃ মানসিক কষ্ট এবং রোগ ব্যাধি ইত্যাদি।
অন্য জীব থেকে প্রাপ্ত ক্লেশকে আধিভৌতিক ক্লেশ বলা হয়। যেমনঃ সাপের কামড়, মশা-মাছি, চোর-গুণ্ডার উপদ্রব ইত্যাদি।
দৈবক্রমে অর্থাৎ দেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত যে ক্লেশ, তাকে আধিদৈবিক ক্লেশ বলা হয়। যেমনঃ অনাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প।
২৬। জীব-চেতনা কয় প্রকার ও কি কি?
উঃ পাঁচ প্রকার - (১) আচ্ছাদিত চেতন, (২) সংকুচিত চেতন, (৩) মুকুলিত চেতন, (৪) বিকশিত চেতন, (৫) পূর্ণ বিকশিত চেতন। পাহাড়, বৃক্ষ আদিতে যে চেতনা, তাকে আচ্ছাদিত চেতনা বলা হয়। পশু, পাখিরা হচ্ছে সংকুচিত চেতন জীব। সাধারণ মানুষ হচ্ছে মুকুলিত চেতন। মানুষের মধ্যে যাঁরা ভগবদ্ভজনে নিযুক্ত হয়েছেন তারা হচ্ছেন বিকশিত চেতন। আর ভগবদ্ভজনে যাঁরা সিদ্ধি লাভ করেছেন তাঁদের চেতনাকে পূর্ণ বিকশিত চেতনা বলা হয়।
২৭। পুনর্জন্ম কি?
উঃ জীবাত্মা যে শরীরের মধ্যে অবস্থান করে সেই শরীর কৌমার থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য অবস্থায় ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু দেহস্থ আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। ঠিক যেমন পুরানো কাপড় পরিত্যাগ করে নূতন কাপড় পরিধান করা হয়, ঠিক তেমনি জীবাত্মা অব্যবহারযোগ্য জরাজীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে তার কর্ম এবং বাসনা অনুসারে আরেকটি নূতন শরীর গ্রহন করে। আত্মার এই নূতন শরীর ধারণকে বলা হয় পুনর্জন্ম।
২৮। কর্মবন্ধন কি?
উঃ জীব এই জগতে বিভিন্ন প্রকারের জড় কামনা বাসনা নিয়ে কর্ম করে থাকে। কিন্তু সে তার প্রতিটি কৃতকর্মের ফলভোগ করতে বাধ্য থাকে। সেই কর্ম অনুসারে তাকে বারবার জড় শরীর ধারণ করতে হয়। নূতন শরীরে সে নূতন কর্ম করে ও ঐসব কর্মের ফল ভোগের জন্য আবার তাকে জন্ম নিতে হয়। এ রকম চলতেই থাকে। এইরূপ বদ্ধ অবস্থাকে বলা হয় কর্ম বন্ধন।
২৯। জীবের চরম লক্ষ্য কি?
উঃ জীবের চরম লক্ষ্য হচ্ছে - পরমেশ্বর ভগবানের সংগে তার হারানো সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া, কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা।
৩০। আনন্দের উৎস কি?
উঃ সর্ব আনন্দের উৎস হচ্ছেন সচ্ছিদানন্দময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। জীব যে নিত্য আনন্দ লাভের আশা করছে, তার জন্য তাঁকে পরম পুরুষ ভগবানের সংগে তাঁর নিত্য, অবিচ্ছেদ্য, প্রেমময়, সম্পর্কের পুনঃস্থাপন করতে হবে।
৩১। অহংকার কয় প্রকার ও কি কি? বর্ননা কর।
উঃ অহংকার দুই প্রকার - (১) সত্য অহংকার, (২) মিথ্যা অহংকার। আমি চিন্ময় আত্মা, কৃষ্ণের নিত্যদাস, এরকম যে ভাব নিয়ে কৃষ্ণের প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্যে কর্ম করা হয়, সেই ভাবকে বলা হয় সত্য অহংকার। আমি এই জড় শরীর এবং আমার শরীরের প্রীতিবিধানের জন্য আমি কর্ম করব এরকম অহংকারকে বলা হয় মিথ্যা অহংকার।
৩২। প্রেয় ও শ্রেয় কি? জীবনে প্রেয় লাভ করা না শ্রেয় লাভ করা শ্রেষ্ঠ?
উঃ যা অল্প সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত হওয়া যায় কিন্তু ক্ষণস্থায়ী এবং অন্তিমে দুঃখজনক তাকে বলা হয় প্রেয়।
যা লাভ করা পরিশ্রম সাপেক্ষ, কিন্তু চিরস্থায়ী এবং সুখদায়ক, তাকে বলা হয় শ্রেয়।
আমাদের জীবনে শ্রেয় লাভ করাই শ্রেষ্ঠ বা উচিত।
৩৩। জীবনে প্রকৃত শ্রেয় কি? বর্ণনা কর।
উঃ জীবনে প্রকৃত শ্রেয় হচ্ছে নিজের স্বরূপ প্রাপ্ত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দে অহৈতুকী ভক্তিভাবে তাঁর সেবায় যুক্ত হওয়া।
৩৪। ভগবান কে?
উঃ শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন ভগবান, যাঁর থেকে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। যিনি সমস্ত বিশ্বব্রহ্মান্ডের পালন করেন এবং সংহারের কারণ হন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান।
৩৫। ভগবান শব্দের অর্থ কি?
উঃ যাহার মধ্যে সমগ্র ঐশ্বর্য্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ পূর্ণমাত্রায় বর্তমান তাকে বলা হয় ভগবান।
৩৬। ভগবান সাকার না নিরাকার?
উঃ ভগবান সাকার; তাঁর রূপ রয়েছে, তবে তা জড় নয়, অপ্রাকৃত। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সচ্ছিদানন্দ বিগ্রহ, তিনি নিত্য, জ্ঞান ও আনন্দময় মূর্তিবিশিষ্ট।
৩৭। কয় প্রকার যোগী আছেন?
উঃ যোগী চার প্রকার - কর্মযোগী, জ্ঞানযোগী, ধ্যানযোগী ও ভক্তিযোগী।
৩৮। কোন প্রকার যোগী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন?
উঃ জ্ঞানযোগী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন।
৩৯। কোন প্রকার যোগী হৃদয়ে পরমাত্মার ধ্যান উপাসনা করেন?
উঃ অষ্টাঙ্গ যোগী বা ধ্যান যোগী ধ্যানের মাধ্যমে পরমাত্মার উপাসনা করিয়া থাকেন।
৪০। কোন প্রকার যোগী সরাসরি ভগবানের উপাসনা করেন?
উঃ ভক্তিযোগ অবলম্বনকারী ভগবানের ভক্তরাই ভগবানের উপাসনা করেন।
৪১। ভগবান যে আছেন তার প্রমাণ কি?
উঃ ভগবানের অস্তিত্বের প্রমাণ লাভ করবার জন্য আমাদের শাস্ত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে। শাস্ত্র থেকে আমরা বুঝতে পারব যে ভগবান আছেন। ভগবান হচ্ছেন তিনি যিনি এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়ের কারণ। যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ এ জগতে আমরা দেখতে পাচ্ছি - একটি বাড়ী আপনা থেকে তৈরী হয়ে যায় না। বাড়ীটি তৈরী করার জন্য কোন ইঞ্জিনিয়ার বুদ্ধি দিয়ে থাকে এবং মিস্ত্রিরা ইট, বালি, পাথর দিয়ে বাড়ীটি তৈরী করে থাকে। ঠিক সেই রকম এই বিশ্বব্রহ্মান্ড আপনা থেকেই এমন সুশৃঙ্খল হয়ে যায় না। সৃষ্টির পেছনে কারো না কারো হাত আছে। যিনি বুদ্ধি প্রদান করেছেন, এই সমস্ত উপাদান প্রদান করেছেন এবং যিনি এই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান।
৪২। ভগবানের সংগে জীবের সম্পর্ক কি?
উঃ ভগবানের সংগে জীবের সম্পর্ক হচ্ছে ভগবান নিত্যপ্রভু এবং জীব তাঁর নিত্যদাস।
৪৩। ভগবানের সংগে জড় জগতের সম্পর্ক কি?
উঃ জড়জগৎ হচ্ছে ভগবানের অনুৎকৃষ্টা বহিরঙ্গা শক্তির থেকে উৎপন্ন।
৪৪। ভগবান কেন জড় জগৎ সৃষ্টি করেছেন?
উঃ প্রথম কারণঃ এই জড় জগৎ হচ্ছে সমস্ত চিন্ময় সৃষ্টির একাংশে অবস্থিত ক্ষুদ্র কারাগার সদৃশ। তাই যারা ভগবানের প্রদত্ত নিয়ম ভঙ্গ করে, তাদেরকে এই জড় জগতে আসতে হয়। এখানে বহিরঙ্গা শক্তি দুর্গাদেবী জড় জগৎরূপ দুর্গের দেখাশুনা করেন এবং ত্রিতাপ ক্লেশ দিয়ে জীবকে শাসন করে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন।
দ্বিতীয় কারণঃ ভগবান এই জড় জগৎ এইজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, জীব যেন তার মিথ্যা প্রভুত্ব করার আকাঙ্ক্ষা ও ভোগবাসনা পরিত্যাগ করে ভগবদ্ভজনের মাধ্যমে ভগবদ্ধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আবার ফিরে যেতে পারে।
৪৫। ভগবানের সৃষ্ট জীব দুঃখ কষ্ট পায় কেন?
উঃ কৃষ্ণ ভুলি সেই জীব অনাদি বহির্মুখ। অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ। (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/১১৭)
এই জড় জগতে দুঃখ কষ্ট পাওয়ার কারণ হচ্ছে আমরা পরমেশ্বর ভগবানকে বিস্মৃত হয়েছি।
৪৬। আত্মা কিভাবে প্রসন্নতা লাভ করতে পারে?
উঃ যখন জীব তার নিত্য, শাশ্বত, ভালোবাসার বস্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সংগে তার সেই লুপ্ত সম্পর্ককে আবার পুনঃস্থাপন করে তাঁর প্রেমময়ী সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে পারে তখন সে প্রসন্নতা লাভ করে।
৪৭। আমি যে আত্মা তার প্রমাণ কি?
উঃ 'আমি' এই 'শরীর' নই, আমি মন নই, আমি বুদ্ধি নই, আমি আত্মা। এর প্রমাণ আমরা ভগবদগীতা আদি শাস্ত্র গ্রন্থ থেকে পেয়ে থাকি। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, "জীবের আসল স্বরূপ হচ্ছে সে চিন্ময় আত্মা, এবং আমার নিত্য সনাতন অংশ"। কেউ যদি একটি শিশুকে দুই বছর বা এক বছর বয়সে তাকে দেখে এবং ৪০ বছর বয়সে তাকে দেখে তাহলে সে দেখবে যে ইতিমধ্যে শিশুটির রূপ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে, তার দেহের, মনের, বুদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে। তবুও সেই লোকটি একই লোক অর্থাৎ তার মধ্যে একটিই সত্তা রয়েছে, যার পরিবর্তন হয় না। সেইটিই হচ্ছে আত্মা, সেটিই হচ্ছে জীবের আসল স্বরূপ, ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র। আর একটি প্রমাণ হচ্ছে - ধরুন আপনার দিদিমা বাড়ীতে শুয়ে আছেন দেখে আপনি বাজার করতে গিয়েছেন। বাজারে আপনি শুনতে পেলেন যে আপনার দিদিমা মারা গেছেন। বাড়ী ফিরে এসে দেখছেন বাজার যাওয়ার আগে দিদিমা যেভাবে খাটের উপর শুয়ে ছিলেন এখনও ঠিক সেই রকম ভাবেই শুয়ে আছেন এবং তাঁর চার পাশে ঘিরে আপনার বাবা বলছেন, "ও আমার মা চলে গেলে" - ভাই বলছে, "দিদিমা চলে গেল" ইত্যাদি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার দিদিমা খাটে শুয়ে আছে, আবার সবাই চিৎকার করছে, 'মা চলে গেল' দিদিমা চলে গেল' ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে - কে চলে গেল? সেইটাই হচ্ছে আত্মা। আত্মা চলে গেলে শরীর জড় অবস্থা প্রাপ্ত হয়। শরীরে কোন চেতনার লক্ষণ দেখা যায় না, অর্থাৎ শরীরটা অচেতন হয়ে যায়। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমি এই 'দেহ' নই 'মন' নই- - আমি হচ্ছি চিন্ময় 'আত্মা'।
৪৮। প্রকৃতির তিনটি গুণ কি কি?
উঃ প্রকৃতির তিনটি গুণ -- সত্ত্বগুণ, রজগুণ এবং তমোগুণ।
৪৯। ভগবান কোথায় থাকেন?
উঃ এই জড় জগতের বাইরে চিন্ময় জগৎ বা বৈকুন্ঠলোক আছে, যেখানে অনেক গ্রহলোক আছে। বৈকুন্ঠ, দ্বারকা, বৃন্দাবন ইত্যাদি ধামে ভগবান বিভিন্ন ভগবৎ - স্বরূপে অবস্থান করেন। একই সংগে তিনি পরমাত্মা রূপে সর্বত্র প্রত্যেকটি অনুপরমাণু ও প্রত্যেকটি জীবের হৃদয়েও বাস করে থাকেন।
৫০। কে প্রকৃত ভগবান এবং কে নকল বা ভন্ড ভগবান তা জানব কি করে?
উঃ শাস্ত্রের মাধ্যমে ভগবানের আসল স্বরূপ জানা যায়।
এই রকম আরো ৬০০টি প্রশ্নোত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ
0 মন্তব্যসমূহ